কবুতরের মাংসের ক্ষতিকর দিক

  

"কবুতরের মাংস অনেকের কাছে এক প্রিয় খাদ। পুষ্টিগুণ ও হালকা স্বাদের জন্য একটি বিশেষভাবে জনপ্রিয় ‌। তবে প্রতিটি খাদ্য পুণ্যের যেমন উপকারিতা আছে তেমনি কিছু ক্ষতিকর দিকও আছে। 

কবুতরের-মাংসের-ক্ষতিকর-দিক

সচেতনতা ভাবে জানলে এবং সাবধানতা অবলম্বন করলে এই  ঝুঁকি গুলো এড়ানো সম্ভব। আজকের আলোচনায় থাকছে কবুতরের মাংস খাওয়ার সম্ভাব্য ক্ষতিকর দিক ও করণীয় সম্পর্কে বিশদ বিশ্লেষণ। 

আরো পড়ুনঃ সিজারের পর পেটের দাগ কমানোর সকল উপায় 

পেজ সূচিপত্র কবুতরের মাংসের ক্ষতিকর দিক 

কবুতরের মাংসের সম্ভাব্য ক্ষতিকর প্রভাব 

১। রোগ জীবাণু ও সংক্রমণের ঝুঁকি 

কবিতর বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও পরজীবী বাহক হতে পারে। বিশেষ করে যদি কবিতার টি সঠিকভাবে পরিচ্ছন্ন না হয় বারোগা গ্রস্থ হয় তবে তার মাংসে নানা ধরনের ক্ষতি কর জীবাণু থাকতে পারে।

. ঝাল মনে লাশ সংক্রামক: খাদ্য বিক্রিয়া, পেটে ব্যথা, ডায়রিয়া এবং জ্বরের কারণ হতে পারে। 

. ক্যাম্পিলোব্যাকটর সংক্রমণ; হজমজনিত সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। 

অভিয়ান এমপ্লয়েন্স: একটি মারাত্মক ভাইরাস সংক্রমক যা মানুষের জন্য প্রাণঘাতই হতে পারে। 

. নিউ ক্লাস সেল ডিজিজ: মানুষের চোখের সংক্রমণ ঘটাতে পারে। 

২। পুষ্টির ভারসাম্যহীনতা 

কবুতরের মাংস কমফ্যাটি ও উচ্চ প্রোটিন যুক্ত হলেও অতিরিক্ত খাওয়া গেলে শরীরে পুষ্টির ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে। বিশেষ করে যারা একমাত্র কবুতরের মাংসকে প্রোটিনের উৎস হিসেবে বেছে নেন, তাদের মধ্যে অন্যান্য পুষ্টির অভাব দেখা দিতে পারে যেমন; 

. পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম বা ফাইবারের ঘাটতি 

. অতিরিক্ত প্রোটিনের কারণে কিডনিতে চাপ 

৩। এলার্জির ঝুঁকি 

কিছু মানুষের শরীরে পাখির মাংস বিশেষত কবিতর থেকে এলার্জিক প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। এলার্জির লক্ষণ গুলো সাধারণত: 

চুলকানি, ত্বকে ফুসকুড়ি, শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানি, চোখে পানি পড়া ও চুলকানি ইত্যাদি হতে পারে। যাদের আগে থেকেই খাদ্য এলার্জি রয়েছে তাদের বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। 

৪। অতিরিক্ত খেলে হজমের সমস্যা 

কবুতরের মাংস তুলনামূলকভাবে সহজপাত্র হলেও যদি অতিরিক্ত মাত্রায় খাওয়া হয় তবে এটি হজমের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে অতিরিক্ত প্রোটিন হজম করতে শরীরকে বেশি পরিশ্রম করতে হয় ফলে হতে পারে: 

পেট ফাঁপা, অম্বল, পেটে ব্যথা.

বিশেষ করে যারা আগে থেকেই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ভোগেন, তাদের জন্য পরিমিত পরিমাণে খাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। 

আরো পড়ুনঃ মিষ্টি কুমড়ার বিচির ১৩ টি উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানুন    

কবুতরের মাংস নিরাপদ রাখতে যা করণীয়

স্বাস্থ্যকর কবিতার নির্বাচন: 

১‌। কবুতর কিনার সময় নিশ্চিত হতে হবে যে এটি সুস্থ এবং পরিষ্কার পরিবেশে পালন করা হয়েছে কিনা 
২। আমার জাত বা পরীক্ষিত উৎস থেকে কেনার চেয়ে 
৩। অর্ধ সিদ্ধ বা কাঁচা মাংস খাওয়া একেবারে বর্জনীয়।

সঠিকভাবে পরিষ্কার ও রান্না করা:

১। রান্নার আগে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। 
২। অন্তত ৭৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় মাংস সিদ্ধ করা উচিত, যাতে সব জীবাণু ধ্বংস হয়। 
৩। অর্ধ সিদ্ধ বা কাঁচা মাংস খাওয়া একেবারে বর্জনীয়। 

পরিমিত পরিমাণে খাওয়া: 

১। দৈনিক খাদ্য তালিকায় বৈচিত্র বজায় রাখতে হবে। 
২‌। সপ্তাহে এক থেকে দুইবার খাওয়া নিরাপদ এবং স্বাস্থ্যকর 

এলার্জির পরীক্ষার পরামর্শ: 

১‌। যাদের খাদ্য এলার্জির প্রবণতা রয়েছে, তারা প্রথমবার খাওয়ার আগে অল্প পরিমাণে খেয়ে পরীক্ষা করা দেখা উচিত। 
২। যদি কোন অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা দেয় তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। 

কবুতরের মাংস বানান অন্যান্য পাখির মাংস

বিষয়    কবুতরের মাংস   মুরগির মাংস   হাঁসের মাংস 

প্রোটিন        উচ্চ                  উচ্চ            মাঝারি 

ফ্যাট            কম                  কম              বেশি 

রোগ 

সংক্রমণের     মাঝারি           কম             মাঝারি 

ঝুঁকি 

রান্নার পদ্ধতি  ভালোভাবে।   স্বাভাবিক সিদ্ধ  ভালোভাব

                      সিদ্ধ 

কবুতরের মাংস স্বাস্থ্যসম্মত হলেও অতিরিক্ত ঝুকিয়ে রাতে সাবধানতা অবলম্বন করা অত্যন্ত জরুরী। 

সতর্কতার কিছু অতিরিক্ত টিপস 

১। রান্নার আগে ও পরে হাত ভালোভাবে ধুয়ে নিন। 

২। রান্নার জন্য আলাদা শরীর ও কাটিং বোর্ড ব্যবহার করুন। 

৩। শিশু গর্ভবতী নারী ও বৃদ্ধাদের জন্য অতিরিক্ত সাবধানতা দরকার। 

৪। যেমন এলাকায় ব্লাড ফুল বা অন্যান্য পাখি সম্পর্কিত রোগের প্রকোপ বেশি সেখানে কবুতরের মাংস খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত।

গর্ভাবস্থায় কবুতরের মাংস খাওয়া যাবে কি বিস্তারিত বিশ্লেষণ

গর্ভাবস্থায় একজন নারীর জীবনের সবচেয়ে সমবেদনশীল ও গুরুত্বপূরণ একটি সময়ে। এই সময়ে প্রতিটি খাবার বেছে নেওয়া দরকার অত্যন্ত সতর্কতার সাথে। কবুতরের মাংস পুষ্টি গুণের সমৃদ্ধ হলেও, গর্ভাবস্থায় পেটে খাওয়া নিরাপদ কিনা সে সম্পর্কে অনেকের মনে প্রশ্ন ওঠে। আজকের আলোচনায় আমরা গভীরভাবে জানবো গর্ভাবস্থায় কবুতরের মাংস খাওয়ার সুবিধা ঝুঁকি এবং বিশেষ সতর্কতা সম্পর্কে। 

কবুতরের মাংসের পুষ্টিগুণ 

কবুতরের মাংস মূলত: 

. উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ 
. আইরন, জিংক , ফসফরাসের চমৎকার উৎস 
. ভিটামিন বি কমপ্লেক্স সমৃদ্ধ 
কবুতরের-মাংসের-ক্ষতিকর-দিক

গর্ভাবস্থায় কবুতরের মাংস খেতে হলে যেসব সর্তকতা মানা জরুরি

১। সঠিকভাবে রান্না করুন :
. মাংস অবশ্যই ভালোভাবে সিদ্ধ ভাগ দিন করতে হবে। 

. ভেতরের ভেতর পর্যন্ত ভালোভাবে রান্না হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে কমপক্ষে ৭৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় দরকার।

. কাঁচা বার অর্ধ সিদ্ধ মাংস একেবারেই খাওয়া যাবেনা ।

২। স্বাস্থ্যকর উৎস থেকে মাংস সংগ্রহ করুন:

. পরিচ্ছন্ন খামার বা নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে কবুতরের মাংস কেনা উচিত। 

. অসুস্থ বা বন্য কবুতর কখনোই খাওয়া যাবে না। 

৩। পরিমিত পরিমাণে খাওয়া 
. গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত কোন একটি নির্দিষ্ট খাদ্যের ওপর নির্ভর না করে পরিমিত ও বৈচিত্র্যময় খাদ্য বাস বজায় রাখতে হবে ।

. সপ্তাহে একবার দুইবার খাওয়া নিরাপদ হতে পারে, তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন নিয়ে। 

৪। এলার্জি পরীক্ষা করুন 

. যদি আগে কখনো কবুতরের মাংস না খেয়ে থাকেন, তবে প্রথমবার অল্প পরিমাণে খেয়ে শরীরের প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করুন। 

. সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। 

৫। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন 

. রান্নার আগে ও পরে হাত ধোয়া জরুরি। 

. রান্নার সময় আলাদা ছুরি বা বোর্ড ব্যবহার করুন যেন কাঁচা মাংসের ব্যাকটেরিয়া অন্যান্য খাবারের না ছড়ায় ।

ডাক্তার কি বলেন 

অনেক ডাক্তার মনে করেন, গর্ভাবস্থায় কবুতরের মাংস খাওয়া যেতে পারে যদি: মাংস ভালোভাবে রান্না করা হয়, এবং স্বাস্থ্যকর উৎস থেকে সংগৃহীত হয়। মায়ের কোন পরবর্তী স্বাস্থ্য সমস্যা না থাকে। যেমন কিডনি  ডিজিজ, গ্যাস্ট্রিক প্রবণতা ইত্যাদি। তবে কিছু চিকিৎসক সতর্ক করে দেন ব্লাড ফ্লোর ঝুঁকি কিংবা টেক্সোপ্লাজমোসিনের সম্ভাবনার কারণে। 

কবুতরের মাংসের এলার্জির লক্ষণ সমৃদ্ধ

কবুতরের মাংস খাওয়ার পর যে সব এলার্জি লক্ষণ দেখা দিতে পারে: 

অল্প তাপমাত্রার প্রতিক্রিয়া: 

১। ঠোঁট , জিব্বা বা গলায় চুলকানি। 
২। তোকে ফুসকুড়ি বা চুলকানি 
৩। চোখে পানি পড়া বা চুলকানি 
৪। হালকা হাসিবা সর্দি 

মাঝারি মাত্রার প্রতিক্রিয়া: 

১ পেট ব্যথা 
২। বমি বমি ভাব বা বমি 
৩। ডায়রিয়া 
৪। মাথাব্যথা মাথা ঘোরা 

গুরুতর প্রতিক্রিয়া অ্যানাফাইল্যাক্সিস:

১‌। শ্বাসকষ্ট 
২‌ গলার স্বর পরিবর্তন বা গলা বন্ধ হয়ে আসা 
৩। দ্রুত হার্টবিট 
৪। ব্লাড প্রেসার কমে যাওয়া 
৫। অজ্ঞান হয়ে যাওয়া 

অ্যানাফাইল্যাকসিস একটি প্রাণঘাতী অবস্থা তাৎক্ষণিক চিকিৎসা প্রয়োজন। 

কবুতরের মাংসের এলার্জি প্রতিরোধে করণীয়

প্রথমবার খাওয়ার সময় অল্প পরিমাণে খাওয়ার চেষ্টা করুন। ছোট্ট একটি অংশ খেয়ে শরীরের প্রতিক্রিয়া দেখুন। কোন সমস্যা হলে খাওয়া বন্ধ করুন এবং প্রয়োজনে ডাক্তার দেখান। 

পুরোপুরি রান্না করা ভালোভাবে রান্না করে জীবাণু ও এলার্জির প্রোটিনের শক্তি কিছুটা কমানো যেতে পারে। অর্ধ সিদ্ধ বা কাঁচা মাংস একেবারেই খাওয়া উচিত নয়। পরিচ্ছন্ন পরিবেশে পালন করা কবুতর থেকে সংগৃহীত মাংস বেশি নিরাপদ। রাস্তার পাশের অপরিচ্ছন্ন মাংস এড়িয়ে চলুন। 

এলার্জির ইতিহাস থাকলে সতর্ক থাকুন ‌ যদি আগে থেকেই পাখির পালক, ডিম বা মাংসের প্রতি এলার্জি থাকে, তবে কবুতরের মাংস খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

নিজস্ব মতামত

কবুতরের মাংসের স্বাদ ও পুষ্টিতে অনন্য হলেও, কিছু মানুষের জন্য এটি এলার্জির উৎস হতে পারে। যদিও কবুতরের মাংসে এলার্জির তুলনামূলকভাবে বিরল ‌‌। তবে ঝুঁকি একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না। 

সঠিকভাবে রান্না করা, পরিচ্ছন্ন উচ্চ থেকে মাংস সংগ্রহ করা, এবং এলার্জির লক্ষণ সম্পর্কে সচেতন থাকা। এই কয়েকটি সহজ নিয়ম মেনে চললেই কবুতরের মাংস নিরাপদ ভাবে উপভোগ করা সম্ভব। 

স্বাস্থ্য আগে,সচেতন থাকুন, সুস্থ থাকুন। 













এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url